জিম করার জন্য কত প্রোটিন প্রয়োজন? - হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার

জিম করার জন্য কত প্রোটিন প্রয়োজন? - হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার

যারা নিয়মিত জিম করেন, তাদের জন্য প্রোটিন একটি অপরিহার্য উপাদান। প্রোটিন শরীরের মাংসপেশি গঠনে, শক্তি উৎপাদনে, এবং পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে জিম করার জন্য কত প্রোটিন প্রয়োজন এবং হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার কী কী হতে পারে? আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কেন জিম করার সময় প্রোটিন প্রয়োজন?

জিমে ভার উত্তোলন বা অন্যান্য ব্যায়াম করার সময় মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রোটিন শরীরের এই ক্ষতি পূরণ করে এবং নতুন মাংসপেশি তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রোটিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছাড়া মাংসপেশি গঠন ধীরগতি হতে পারে, এমনকি ওজন কমতে পারে।

জিম করার জন্য কত প্রোটিন প্রয়োজন?

প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা একেকজনের শরীরের ওজন, ব্যায়ামের ধরন, এবং লক্ষ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত:

  • শরীরের ওজন প্রতি কিলোগ্রামে ১.২-২.২ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
  • উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ওজন ৭০ কেজি হয় এবং আপনি মাংসপেশি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে প্রতিদিন ৮৪ থেকে ১৫৪ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

যারা বেশি ইনটেন্স ব্যায়াম করেন, যেমন বডি বিল্ডার বা অ্যাথলিট, তাদের জন্য প্রোটিনের চাহিদা আরও বেশি হতে পারে।

হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার

সঠিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হলে আপনাকে কিছু হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে। এখানে কিছু পুষ্টিকর খাবার উল্লেখ করা হলো:

১. ডিম

ডিম প্রোটিনের একটি সহজলভ্য এবং সস্তা উৎস। একটি ডিমে প্রায় ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সকালের নাশতায় ডিম খেলে সহজেই প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হয়।

২. চিকেন ব্রেস্ট

চিকেন ব্রেস্ট কম ফ্যাটযুক্ত এবং উচ্চ প্রোটিনের একটি জনপ্রিয় খাবার। ১০০ গ্রাম চিকেন ব্রেস্টে প্রায় ৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

৩. মাছ

মাছ প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। বিশেষ করে স্যামন, টুনা, এবং সার্ডিনে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। ১০০ গ্রাম স্যামনে প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

৪. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য

দুধ, দই, এবং পনিরের মতো দুগ্ধজাত পণ্যে প্রচুর প্রোটিন থাকে। ১ কাপ দুধে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০০ গ্রাম গ্রিক দইয়ে প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

৫. মটরশুঁটি ও অন্যান্য লেগুম

যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্য মটরশুঁটি, ছোলা, লেন্সিল প্রোটিনের ভালো উৎস। এক কাপ মটরশুঁটিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

প্রোটিন শেক ও সাপ্লিমেন্ট

অনেক সময় খাবার থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন পাওয়া কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রোটিন শেক ও সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন:

  • ওয়েই প্রোটিন: এটি সবচেয়ে প্রচলিত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট যা সহজে শরীরে শোষিত হয়।
  • কেসিন প্রোটিন: এটি ধীরে ধীরে শরীরে শোষিত হয়, তাই রাতে খাওয়ার জন্য ভালো।
  • প্ল্যান্ট বেসড প্রোটিন: নিরামিষভোজীদের জন্য সোয়া, মটরশুঁটি, এবং হেম্প প্রোটিন পাওয়া যায়।

কতটুকু প্রোটিন একবারে খাওয়া উচিত?

একবারে বেশি পরিমাণে প্রোটিন খেলে শরীর পুরোপুরি শোষণ করতে পারে না। সাধারণত একবারে ২০-৩০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া সবচেয়ে ভালো, যা সহজে শোষিত হয় এবং মাংসপেশি গঠনে সহায়ক হয়।

প্রোটিনের সঠিক গ্রহণ কৌশল

  • সকালে ব্রেকফাস্টে: ডিম, ওটস, এবং দুধ খেতে পারেন।
  • ওয়ার্কআউটের পরে: প্রোটিন শেক বা হাই প্রোটিনযুক্ত স্ন্যাকস গ্রহণ করতে পারেন।
  • রাতে ডিনারে: চিকেন, মাছ, বা শাকসবজি এবং মটরশুঁটি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন।

প্রোটিন বেশি খেলে কি ক্ষতি হতে পারে?

প্রোটিন শরীরের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনি এবং লিভারের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রোটিন গ্রহণের সময় সঠিক পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

শেষ কথা

জিম করার জন্য কত প্রোটিন প্রয়োজন এবং হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন শুধু মাংসপেশি গঠনে নয়, বরং ওজন নিয়ন্ত্রণ ও শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সহায়ক। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন এবং আপনার ডায়েট প্ল্যানে হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।


সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী

১. প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কি নিরাপদ?
সঠিক পরিমাণে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এটি নিরাপদ। তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. নিরামিষভোজীদের জন্য কি কি প্রোটিনের উৎস আছে?
মটরশুঁটি, ছোলা, সোয়া, এবং বাদাম নিরামিষভোজীদের জন্য চমৎকার প্রোটিনের উৎস।

৩. ওয়ার্কআউটের কতক্ষণ পরে প্রোটিন খাওয়া উচিত?
ওয়ার্কআউটের ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে প্রোটিন খাওয়া উচিত, যা মাংসপেশি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

৪. প্রতিদিন কত ক্যালোরি প্রোটিন থেকে আসা উচিত?
সাধারণত মোট ক্যালোরির ১৫-২৫% প্রোটিন থেকে আসা উচিত।

৫. কীভাবে প্রোটিনের ঘাটতি বুঝব?
শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, এবং মাংসপেশির ব্যথা হলে প্রোটিনের ঘাটতি থাকতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url