ওয়ার্কআউট করার কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত?
ওয়ার্কআউট করার পর শরীর পুনরুদ্ধারের জন্য সঠিক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো জানেন না, ওয়ার্কআউট করার কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত এবং ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত তা শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ওপর বড় প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে আমরা জানবো, কিভাবে আপনি সঠিক সময়ে এবং সঠিক খাবার বেছে নিয়ে দ্রুত ফিটনেস লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।
ওয়ার্কআউট করার কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত?
বেশিরভাগ ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, ওয়ার্কআউটের ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে খাবার খাওয়া উচিত। কেননা:
- অ্যানাবলিক উইন্ডো: এটি একটি সময় যেখানে শরীর প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুব ভালোভাবে শোষণ করে, যা মাংসপেশির পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধি বাড়ায়।
- গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধার: ব্যায়ামের সময় গ্লাইকোজেন স্টোর নিঃশেষ হয়ে যায়, যা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের মাধ্যমে দ্রুত পুনরুদ্ধার করা যায়।
- পেশির ক্ষতি কমানো: সঠিক সময়ে প্রোটিন খাওয়া মাংসপেশির ক্ষতি কমিয়ে গঠনে সহায়তা করে।
ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত?
ওয়ার্কআউটের পরে আপনার খাবারের মধ্যে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকতে হবে। এগুলো শরীরের পুনরুদ্ধার, মাংসপেশির গঠন, এবং শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক। নিচে কিছু প্রস্তাবিত খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
১. প্রোটিন শেক
ওয়ার্কআউটের পর প্রোটিন শেক খাওয়া একটি সহজ ও কার্যকরী উপায়। এতে থাকা ওয়েই প্রোটিন দ্রুত শরীরে শোষিত হয় এবং মাংসপেশি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
- উপকরণ: ১ স্কুপ ওয়েই প্রোটিন, ১ কাপ দুধ, ১টি কলা।
- পুষ্টিগুণ: ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন, ১৫-২০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
২. গ্রিলড চিকেন ও ব্রাউন রাইস
চিকেন প্রোটিনের একটি ভালো উৎস যা মাংসপেশি গঠনে সহায়ক, এবং ব্রাউন রাইস ধীরে শোষিত কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।
- উপকরণ: ১০০ গ্রাম গ্রিলড চিকেন, ১ কাপ ব্রাউন রাইস।
- পুষ্টিগুণ: ৩০ গ্রাম প্রোটিন, ৫০-৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
৩. ওটমিল ও ফলের স্মুদি
ওটমিল ও ফলের স্মুদি প্রাকৃতিক শর্করা এবং ফাইবারের ভালো উৎস, যা দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
- উপকরণ: ১/২ কাপ ওটস, ১টি আপেল, ১ চা চামচ মধু।
- পুষ্টিগুণ: ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ৪০-৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
৪. ডিম ও সবজি
ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং সবজির মধ্যে থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক।
- উপকরণ: ৩টি ডিম, পালং শাক, টমেটো।
- পুষ্টিগুণ: ২০ গ্রাম প্রোটিন, ১০-১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
পানি পান ও হাইড্রেশন
ওয়ার্কআউটের পর পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘাম ঝরে যাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই, কমপক্ষে ২-৩ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়াও ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ ড্রিঙ্ক বা কোকোনাট ওয়াটার খেলে শরীর দ্রুত রিহাইড্রেটেড হয়।
ব্যায়াম পরবর্তী খাবারে কি ভুল করা উচিত নয়?
- চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেলে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শোষণে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার: চিনিযুক্ত খাবার দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু এটি শরীরে ইনসুলিন স্পাইক করে ওজন বাড়াতে পারে।
- খাবার এড়িয়ে চলা: ওয়ার্কআউটের পর খাবার না খেলে মাংসপেশি পুনরুদ্ধার ধীরগতি হতে পারে।
উপসংহার
ওয়ার্কআউট করার কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত এবং ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত তা জানা শরীরের পুনরুদ্ধার ও মাংসপেশি গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে এবং সঠিক ধরনের খাবার খেলে আপনি দ্রুত আপনার ফিটনেস লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। তাই, ওয়ার্কআউটের পর ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী
১. ওয়ার্কআউটের কতক্ষণ পর প্রোটিন শেক খাওয়া উচিত?
প্রোটিন শেক ওয়ার্কআউটের ৩০ মিনিটের মধ্যে খাওয়া উচিত যাতে মাংসপেশির পুনরুদ্ধার দ্রুত হয়।
২. ব্যায়ামের পর শুধু ফল খাওয়া কি যথেষ্ট?
ফল শরীরকে শক্তি দেয়, তবে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
৩. চর্বিযুক্ত খাবার কি ব্যায়ামের পর খাওয়া উচিত?
না, চর্বিযুক্ত খাবার খেলে প্রোটিন শোষণের হার কমে যায়, যা মাংসপেশির বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ওয়ার্কআউটের পর কতটুকু পানি পান করা উচিত?
ওয়ার্কআউটের পর কমপক্ষে ৫০০-৭৫০ মিলি পানি পান করা উচিত শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে।
৫. ব্যায়ামের পর খাবার এড়িয়ে চললে কি হবে?
খাবার না খেলে মাংসপেশির পুনরুদ্ধার ধীর হয় এবং শরীর দুর্বল হতে পারে।