ব্যায়াম করার পর শরীর ব্যথা হয় কেন? - ব্যথা কমানোর উপায়
ব্যায়ামের পর শরীরে ব্যথা অনুভব করা একটি সাধারণ ঘটনা। অনেকেই ব্যায়াম শুরুর পর এই সমস্যায় পড়েন এবং চিন্তিত হন। আসলে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে শরীরের পেশি নতুনভাবে কাজ করছে। আজ আমরা জানবো, ব্যায়াম করার পর শরীর ব্যথা হয় কেন এবং এই ব্যথা দ্রুত কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়।
ব্যায়াম করার পর শরীর ব্যথা হয় কেন?
ব্যায়ামের পর শরীর ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ হলো Delayed Onset Muscle Soreness (DOMS)। এটি সাধারণত নতুন ব্যায়াম শুরু করার পর, ভারী ব্যায়াম করলে, বা পেশির ওপর বেশি চাপ পড়লে হয়ে থাকে।
প্রধান কারণগুলো:
- পেশির ক্ষুদ্র ক্ষতি (Micro-tears): ব্যায়াম করলে পেশিতে ছোট ছোট ক্ষতি হয়। পেশি পুনর্গঠনের সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
- ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা: অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পেশিতে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হয়, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
- নতুন ব্যায়াম: নতুন কোনো ব্যায়াম শুরু করলে শরীরের পেশি অভ্যস্ত না থাকায় ব্যথা হয়।
- ওভার ট্রেনিং: অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে, যার ফলে ব্যথা হয়।
সাধারণত, এই ব্যথা ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয় এবং ২-৩ দিনের মধ্যে কমে যায়।
ব্যথা কমানোর উপায়
১. পেশি স্ট্রেচিং করুন
ব্যায়ামের পর হালকা স্ট্রেচিং করলে পেশির রক্ত চলাচল বাড়ে এবং ব্যথা কমতে সাহায্য করে।
- প্রতিটি প্রধান পেশির গ্রুপ স্ট্রেচ করুন।
- ১০-১৫ মিনিট ধরে স্ট্রেচিং করুন।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীর হাইড্রেটেড থাকলে পেশির ব্যথা দ্রুত কমে। পানি শরীর থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বের করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন।
৩. গরম বা ঠান্ডা সেঁক নিন
- ঠান্ডা সেঁক: ব্যায়ামের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা ঠান্ডা সেঁক নিলে ব্যথা ও ফোলা কমে।
- গরম সেঁক: ২৪ ঘণ্টা পর গরম সেঁক নিলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং ব্যথা দ্রুত কমে।
৪. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান
প্রোটিন পেশির পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং ব্যথা দ্রুত কমায়। ব্যায়ামের পর প্রোটিন শেক বা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।
- ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, এবং ডাল বেশি করে খান।
৫. ম্যাসাজ করুন
পেশির ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- হালকা তেল বা বডি লোশন দিয়ে ম্যাসাজ করুন।
৬. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিলে পেশি পুনরুদ্ধারের সুযোগ পায় এবং ব্যথা কমে যায়।
- প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- ব্যায়ামের মাঝে ১-২ দিনের বিশ্রাম দিন।
৭. ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক ব্যবহার করুন
তীব্র ব্যথা হলে অস্থায়ীভাবে ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ব্যবহার করবেন না।
ব্যায়াম করার পর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি
- হলুদ দুধ: হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্যথা কমায়। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
- আদা চা: আদা ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। দিনে দুইবার আদা চা পান করতে পারেন।
- নারকেল তেল ম্যাসাজ: পেশিতে হালকা নারকেল তেল ম্যাসাজ করলে ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
ব্যথা কমাতে কিছু সতর্কতা
- ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন করুন: ব্যায়ামের আগে ও পরে অবশ্যই ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন করুন।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না: শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত চাপ দিলে ব্যথা বাড়তে পারে।
- সঠিক ফর্ম বজায় রাখুন: ব্যায়ামের সময় সঠিক ফর্ম বজায় রাখলে আঘাত ও ব্যথা কম হবে।
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: শরীরের পুনরুদ্ধারে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
উপসংহার
ব্যায়াম করার পর শরীর ব্যথা হয় কেন এবং ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক এবং এটি পেশির শক্তিশালী হওয়ার লক্ষণ। তবে ব্যথা কমাতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক ডায়েট, এবং হালকা ম্যাসাজ আপনার ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে শরীর এই ব্যায়ামের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী
১. ব্যায়ামের পর ব্যথা হওয়া কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, নতুন ব্যায়াম বা ভারী ব্যায়াম করলে পেশিতে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক।
২. ব্যায়ামের পর ব্যথা কতদিন থাকে?
সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে ব্যথা কমে যায়। তবে তীব্র ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩. ব্যায়ামের পর ব্যথা কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী?
স্ট্রেচিং, গরম বা ঠান্ডা সেঁক এবং পর্যাপ্ত পানি পান ব্যথা কমাতে সবচেয়ে কার্যকর।
৪. ব্যথা হওয়ার সময় কি ব্যায়াম করা উচিত?
হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে, তবে তীব্র ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
৫. কি হলুদ দুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।