জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে কি হয় - কতটুকু খাওয়া উচিত?

জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে কি হয় - কতটুকু খাওয়া উচিত?

জিম করার পর শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ছোলা এমন একটি খাবার যা প্রোটিন, ফাইবার, এবং বিভিন্ন ভিটামিনে সমৃদ্ধ। কিন্তু প্রশ্ন আসে, জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে কি হয় এবং কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিত? আসুন, এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি।

জিম করার পর কাঁচা ছোলা খাওয়া কেন উপকারী?

কাঁচা ছোলা হলো প্রাকৃতিক প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা মাংসপেশি পুনরুদ্ধারে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়ক। জিমের পরে, আপনার শরীর প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে চায়, যা কাঁচা ছোলা খেলে সহজেই পূরণ হয়।

কাঁচা ছোলার উপকারিতা:

  • উচ্চ প্রোটিন: প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ২০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ: ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ও মিনারেল: কাঁচা ছোলায় ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, এবং আয়রন থাকে, যা শরীরের শক্তি বাড়ায়।

জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে কি হয়?

জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে শরীরে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়:

১. মাংসপেশির দ্রুত পুনরুদ্ধার

জিমে ভারী ব্যায়ামের পরে মাংসপেশির ক্ষতি হয়, যা পূরণ করতে প্রোটিন প্রয়োজন। কাঁচা ছোলা খেলে প্রোটিন সরবরাহ হয়, যা মাংসপেশির ক্ষতি পূরণ করে এবং শক্তিশালী করে।

২. শক্তি বৃদ্ধি

কাঁচা ছোলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি প্রদান করে, যা শরীরকে এনার্জি রিস্টোর করতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখে এবং ক্ষুধা কমায়।

৩. ফ্যাট কমাতে সহায়ক

ফাইবার সমৃদ্ধ কাঁচা ছোলা শরীরের বিপাক হার বাড়ায় এবং ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।

কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিত?

প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম কাঁচা ছোলা খাওয়া যথেষ্ট। এটি প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে এবং মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার সঠিক উপায়

কাঁচা ছোলা খাওয়ার আগে ৬-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি ছোলার ফাইটিক অ্যাসিড কমায়, যা পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়। এছাড়া, ভিজিয়ে রাখার ফলে ছোলা হজমে সহজ হয় এবং এর প্রোটিন শোষণের হার বাড়ে।

ভিজিয়ে রাখা কাঁচা ছোলার উপকারিতা:

  • হজমে সহায়ক: ফাইটিক অ্যাসিড কমায়, যা হজমে সহায়তা করে।
  • পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধি: ভিজিয়ে রাখলে ভিটামিন এবং মিনারেলের শোষণ বাড়ে।
  • গ্যাস কমায়: কাঁচা ছোলা সরাসরি খেলে অনেক সময় গ্যাস হতে পারে, যা ভিজিয়ে রাখলে কমে যায়।

কাঁচা ছোলা এবং অন্যান্য প্রাক-ওয়ার্কআউট খাবারের তুলনা

খাবারপ্রোটিন (প্রতি ১০০ গ্রাম)ফাইবারশক্তি প্রদান
কাঁচা ছোলা২০ গ্রামউচ্চদ্রুত শক্তি প্রদান
ওটস১৩ গ্রামউচ্চদীর্ঘ সময় শক্তি প্রদান
ডিম১২ গ্রামকমপ্রোটিন সমৃদ্ধ
কলা১.১ গ্রামমধ্যমতাত্ক্ষণিক শক্তি

কাঁচা ছোলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা

  • অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত কাঁচা ছোলা খেলে গ্যাস এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন: কাঁচা ছোলায় উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনি সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • ভিজিয়ে খাওয়া উচিত: সরাসরি কাঁচা ছোলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

উপসংহার

জিম করার পর কাঁচা ছোলা খেলে কি হয় এবং কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিত এই প্রশ্নের উত্তর হলো, কাঁচা ছোলা প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার যা মাংসপেশির বৃদ্ধি এবং পুনরুদ্ধারে সহায়ক। প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম কাঁচা ছোলা খেলে আপনি দ্রুত শক্তি পাবেন এবং আপনার ওয়ার্কআউটের ফলাফল উন্নত হবে। সঠিকভাবে ভিজিয়ে খেলে এটি হজমে সাহায্য করবে এবং শরীরকে পুষ্টি প্রদান করবে।


সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী

১. কাঁচা ছোলা খাওয়ার পর কি পানি পান করা উচিত?
হ্যাঁ, কাঁচা ছোলা খাওয়ার পর পানি পান করলে হজম ভালো হয় এবং শরীর হাইড্রেটেড থাকে।

২. কি কাঁচা ছোলা ওজন কমাতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, কাঁচা ছোলায় ফাইবার থাকে, যা ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. কাঁচা ছোলা কি রাতে খাওয়া ঠিক?
না, কাঁচা ছোলা হজমে সময় লাগে, তাই এটি দিনে খাওয়া ভালো।

৪. জিম করার কতক্ষণ পরে কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত?
জিমের ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর কাঁচা ছোলা খাওয়া ভালো, যা দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করে।

৫. কাঁচা ছোলা কি প্রোটিন শেকের বিকল্প হতে পারে?
হ্যাঁ, কাঁচা ছোলা প্রোটিন সমৃদ্ধ, তাই এটি প্রোটিন শেকের একটি প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url